জমির মালিকানা ও রেকর্ড যাচাই পদ্ধতি!

 জমির মালিকানা ও রেকর্ড যাচাই পদ্ধতি!


ভূমি বিডির পক্ষ থেকে আজকে আলোচনা করব আপনারা কিভাবে জমির মালিকানা ও জমির রেকর্ড যাচাই করতে পারবেন।


জমির মালিকানা ও রেকর্ড যাচাই করতে আপনার যে বিষয়গুলো জানতে হবে  তা নিচে ধারাবাহিকভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

জমির মালিকানা ও রেকর্ড যাচাই পদ্ধতি!



জমির রেকর্ড যাচাই


জমির রেকর্ড যাচাই করতে আপনাকে নিচের সকল বিষয় জানতে হবে।


  1. জমির খতিয়ান বা পর্চা কি তা জানতে হবে।

  2. জমির খতিয়ানে কি কি উল্লেখ থাকে এবিষয় জানতে হবে।

  3. খতিয়ানের প্রকারভেদ 

  4. বি.এস খতিয়ান সম্পর্কে জানতে হবে।

  5. এস.এ খতিয়ান 

  6. আর.এস খতিয়ান



জাল দলিল চেনার উপায়


  1. কোন দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে প্রথমে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখতে হবে যে, দলিলটির রেজিস্ট্রি কর্যক্রম শেষ হয়েছে কি-না অর্থাৎ বালাম বহিতে নকলকরন কাজ ষেষ হয়েছে কি-না। রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ না হয়ে থাকলে দলিলটি সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষন করা মূল দলিলের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে সদরের রেকর্ড রুমে সংরক্ষণ করা বালাম বহির সাথে দলিলটি মিলিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্ট ফিস প্রদান করে দলিলটি তল্লশী ও পরিদর্শনের জন্য নির্দিষ্ট আবেদন ফর্মে আবেদন করতে হবে।


  1. সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট উল্লেখিত জমির সিউটেশন বা নামজারী সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে।নামজারীতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না, পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সি.এস খতিয়ানকে ভিত্তি হিসেবে ধরতে হবে। সিএস খতিয়ানের সঙ্গে বিক্রেতার নামজারী খতিয়ানের কোন গরমিল থাকলে জাল-জালিয়াতি আছে মর্মে ধরে নিতে হবে। 


  1. দলিলের জমির মাঠপর্চা যাচাই করতে হবে।এক্ষেত্রে উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট ফিস প্রদান করে আবেদনের মধ্যমে মাঠপর্চা উঠিয়ে যাচাই করতে হবে। সংশ্লিষ্ট জমির মাঠপর্চা অন্য ব্যাক্তির নামে হলে সেখানে জাল জালিয়াতি আছে মর্মে ধরে নিতে হবে।


  1.  দলিলটি হেবার ঘোষণাপত্র বা দানের ঘোষণারপত্র হলে সেক্ষেত্রে দাতা-গ্রহীতার মধ্যে বিদ্যমান পরীক্ষা করতে হবে।এধরনের দলিল নির্দিষ্ট কয়েকটি সম্পর্কের মধ্যে হয়ে থাকে। যেমন: স্বমী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, আপন ভাই-বোন, নানা-নানী, নাতি-নাতনী, দাদা-দাদী মধ্যে হয়ে থাকে।



  1. মূল মালিকের স্বাক্ষর নকল করে জাল দলিল তৈরি তরতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মধ্যমে স্বক্ষরের সত্যতা যাচাই করতে হবে।


  1. রেজিস্ট্রি অফিসের সীল জাল করে দলিল তৈরি হলে প্রয়োজনে রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হবে।


  1. সম্প্রতি রেজিস্ট্রি করা কোন দলিলের সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখককে জিজ্ঞাসা করেও জাল দলিল সনাক্ত করা যেতে পারে।

  2.  দলিলটি সাম্প্রতিক রেটিস্ট্রিকৃত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল হলে সেটি নির্দিষ্ট ফরমেটে প্রস্তত কিনা তা যাচাই করুন। কারণ বর্তমানে ১৯ টি কলামে দলিলটি প্রস্তুতে বিধান রয়েছে।

  3. আইন ও বিধান সম্পতভাবে পাওয়ারদাতা কর্তৃক পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কর্তৃক কোন দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রি করালে জাল বলে গন্য হইবে।

  4. সিিএস জরিপ পরবর্তী সময়ে জমিটি যতবার বিক্রি বা হস্তান্তর হয়েছে তার সঙ্গে জমির পরিমান মিল আছে কিনা তা যাচাই করুন।

  5. দলিলে ব্যবহৃত নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প সাধারনত সনদপ্রাপ্ত কোন স্ট্যাম্প-ভেন্ডারের কাছ থেকে কেনা হয়। স্ট্যাম্প ভেন্ডারগণ এক্ষেত্রে রেজিস্টার বহিতে স্ট্যাম্প ক্রেতার নাম লিখে রাখেন এবং স্ট্যাম্পে নির্দিষ্ট নম্পর ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে ভেন্ডারের মাধ্যমে স্ট্যাম্প ক্রেতার নাম ও স্ট্যেম্প নম্পর পরীক্ষ করে জাল দলিল সনাক্ত করা যেতে পারে।


জাল দলিলের মামলা ও বাতিল করার উপায়


জাল দলিলের মামলা ও বাতিল করার উপায়



কিছু দলিল যেমন- বায়নাপত্র দলিল, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) দলিল, উইল দলিল, অছিয়ত দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে “বাতিলকরণ দলিল” রেজিস্ট্রির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষ তা বাতিল করতে পারে। দলিল জাল হলে সেই দলিল বাতলের ক্ষমতা সাব-রেজিস্ট্রার এর নেই।



আইনে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল বাতিলের ক্ষমতা আদালতের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তাই দলিল বাতিলের জন্য আদালতে মামলা করতে হবে।


সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর ৩৯ ধারায় রেজিস্ট্রিকৃত দলিল বাতিলের বিধান লেখা রয়েছে। এ ধারা মোতাবেক, যে কোন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে লিখিত চুক্তি বাতিল কিংবা বাতিলযোগ্য, যার যুক্তিগঙ্গত সম্ভাবনা আছে যে, সেরুপ দলিল যদি অনিস্পন্ন অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়, তবে তার গুরুতর ও অপূরণীয় ক্ষতির হবে, তবে সে দলিলটি বাতিল বা বাতিলযোগ্য ঘোষনার জন্য মামলা দায়ের করতে এবং আদালত স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে উক্ত রুপে রায় প্রদান করতে পারেন ও ‍চুক্তিটি বাতিল করার নির্দেশ দিতে পারেন।


তবে যদি কোন  দলিল রোজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ অনুসারে রেজিস্ট্রিকৃত হয়ে থাকে (অর্থাৎ বালাম বহিতে নকল বা কপি হয়ে থাকে) তবে আদালত এরুপ ডিক্রীর একটি কপি সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরন করবেন। আদালতের আদেশ প্রপ্তির পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, দলিলটি রেজিস্টার বইয়ের যে পৃষ্টায় নকল হয়েছে সেখানে বিলুপ্তির বিষয়ে টীকা লিপিবদ্ধ করাবেন।


কোন রেজিস্ট্রিকৃত দলিল আদালতে জাল বা কপট পরিচয় প্রদানকারী ব্যক্তির মাধ্যমে রেজিস্ট্রিকৃত হয়েছে মর্মে ঘোষিত হলে, সংশ্লিষ্ট আদালত হতে ডিক্রির নকল প্রাপ্তির পর রেজিস্ট্রি অফিসে সংশ্লিষ্ট রেজিস্টার বহিতে নকলের মার্জিনে এবং প্রাপ্তি সাপেক্ষে দলিলটিতেও উক্ত বিষয়ে একটি টীকা লিপিবদ্ধ করতে হবে।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post